লেখক -শাহ জাহান আহমেদ(মাল্টা থেকে)
মুয়াজ্জেনের উদাস ধ্বনিটি গগনে গগনে বাজে,
জপে ঈদগাতে তসবি ফকির,পূজারী মন্ত্র পড়ে,
সন্ধ্যা-উষার বেদবাণী যায় মিশে কোরানের স্বরে;
সন্ন্যাসী আর পীর,
মিলে গেছে হেথা,-মিশে গেছে হেথা মসজিদ,মন্দির
(জীবনানন্দ দাশ)
সুফিবাদ ও শাহ আরফিন(র:)
দরবেশ ,আউলিয়া ও বুজুর্গ কারা ? তাদের কি আসলেই কোন ক্ষমতা ছিল?মাজার গুলোতেই ছোট থেকেই দেখছি শিরনী দিতে, পাগলা বাবার নামে গাজা টানে আর আউলিয়া/দরবেশের নাম জপে , এরা আসলে কি? এর জন্য সামান্য ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করি।
শাহ আরপিন (র:) এই গ্রামের কিছু দিন বসবাস করেন এবং যে জায়গায় আস্তানা তৈরি করেছিলেন, সেটাই মুল মোকাম। ঐ জায়গায় নাম হয় মোকাম পাড়া।
মোকাম শব্দের অর্থ– বাসস্থান,ঘর,বাড়ি,ব্যবসায় বা কারবারের জায়গা।
সুফিবাদ কি: সুফি সাধকেরা জাগতিক বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন। উমাইয়া শাসন আমলে হযরত হোসেনের হত্যাকাণ্ডের পর আলী পন্থী মুসলমানেরা রাজনৈতিক ভাবে কোনঠাসা হয়ে যায় এবং ব্যাপকহারে ইসলামী স্কলারেরা সুফিবাদের দিকে ঝোকে পরে। তারা বহু মহাদেশ ও দেশে দেশে ছড়িয়ে পরে , এতে ইসলাম প্রচার ও বিস্তৃতি লাভ করে । তবে এর আগেও এই ধারাটা ছিল,
তারা শিক্ষা কার্যক্রম ও ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ গঠনে ব্যাপক অবদান রাখেন।
কোন রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় নয় আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে ইসলামের মূল ধারায় ফিরে যেতে চায় ও মুল ইসলামকে জিয়ে রাখার চেষ্টাই করেন।
আরবি সোফ শব্দ থেকে সুফি শব্দটি সুচনা। যার অর্থ পশম এবং সুফি শব্দের অর্থ পশমী পোশাকধারী ব্যক্তি। তারা অতি সাধারণ পশমের পোশাক, শুধু মাত্র রুটি ও পানি আহার করে আধাত্বিক সাধনায় রত থাকতেন ।
সুফি সাধনার জন্য পশমী পোশাকের বাধ্যবাধকতা নাই।সুফিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সন্যাসবাদ, বিশেষত আল্লাহর সাথে ঐকান্তিক সম্পক্য স্থাপনের জন্য।
সূফিগণ মুহাম্মদ (স:)-কে আল-ইনসান আল-কামিল (প্রথম ব্যক্তি যিনি আল্লাহর নৈতিকতাকে পরিপূর্ণরূপে ব্যাখ্যা করেছেন) বলে আখ্যায়িত করে থাকে, এবং তাকে নেতা ও প্রধান আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক হিসেবে দেখে।সকল সূফি তরিকা মুহাম্মদ (স:)এর কাছ থেকে পাওয়া তাদের অধিকাংশ অনুশাসন তার চাচাতো ভাই ও জামাতা হররত আলীর বরাতে গ্রহণ করে থাকে, এবং তাকে উল্লেখযোগ্য আলাদা ও বিশেষ ব্যক্তি মনে করে। সুফিবাদের মুল মর্মকথা হল আত্বার কুপ্রবৃদ্ধি সাথে অবিরাম জেহাদ করে জরজগৎ থেকে মুক্তি পাওয়া। আত্বা পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পক্য স্হাপন করা। সুফিবাদে স্রষ্টা ও সৃষ্টি মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কে আধাত্বিক ধ্যান জ্ঞানের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়।
ইমাম গাজ্জালীর মতে,আল্লাহ্ ব্যতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্বাকে পবিত্র করে সর্বদা আল্লাহ্ র আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্ তে নিমগ্ন থাকার নাম সুফিবাদ।
আত্বার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ এবং ফানাফিল্লাহ মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ লাভ করা যায়।
ফানাফিল্লাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে অবস্হান করা আর বাকাবিল্লাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে স্থায়ীভাবে বিলিন হয়ে যওয়া। বাকাবিল্লাহ আর্জিত হলে সুফি আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তাহাদের মনে সর্বদা আনন্দ বিরাজ করে।
পৃথিবীতে সুফিবাদের বিভিন্ন তরিকা আছে ,তার মধ্যে কাদেরিয়া তরিকা অন্যতম। এই তরিকার লোকেরা ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলি বিশ্বাস করতেন ।
কোন কোন সুফি দিনে তিন থেকে চার শত রাকাত নফল নামাজ আদায় করতেন। প্রাথমিক যুগের সুফিরা বিশ্বাস করতেন,রাসুল(স:)ইন্তিকালের পর অহি আসা বন্ধ হয়ে যায়,তাই আল্লাহর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হল নামাজ।
ইমাম গাজ্জালী মূলধারার আলেমদের সঠিক মনে করতেন, তবে অধিকতর সঠিক মনে করতেন সুফিবাদকে।
মৌওলানা জালাল উদ্দিন রুমি প্রমুখ যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাতে এ কথা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তার রাসুলের নির্দেশিত পথ ও জীবন ব্যবস্থা নিষ্ঠার সাথে প্রতিফলন করাই সুফিবাদের ধর্ম ।
বর্তমানে বিভিন্ন মাজারে যা হচ্ছে নির্জলা শিরিক ছাড়া আর কিছুই না। ক্রমশ——
কমেন্ট করুন